তহজীব-এ-মৌসিকী

লেখক  জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ   প্রকাশক  বাউলমন 

                                                                                        বোর্ড বাঁধাই

যে যুগে শ্রী জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের জন্ম সে যুগে শিক্ষিত বাঙালী মধ্যবিত্তদের মধ্যে সুরের চর্চা, কলার চর্চা ছিল নিম্নরুচির পরিচয়—যাঁরা এ সবের চর্চা করতেন তাঁদের সামাজিক অবস্থান ছিল অনেক নীচুতে। অপরপক্ষে, যাঁরা ধ্রুপদী সঙ্গীতের চর্চা করতেন তাঁরা থাকতেন আপন ঘরানার মধ্যে বদ্ধ। শিক্ষার প্রসার তাঁদের মধ্যে অল্পই ছিল। দুই জগতের দূরত্ব অনেক যোজন। বাউল গান, পদাবলী কীর্তন, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া বাংলার নিজস্ব সম্পদ। কিন্তু উত্তর ভারতীয় ধ্রুপদী গানের প্রচার মহারাষ্ট্র বা উত্তরপ্রদেশের তুলনায় বাংলায় অপ্রতুল ছিল। এই সময় মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ, যেমন গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তী, এখানে উত্তর ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের প্রসার ঘটান। এমত এক বিচিত্র পরিবেশে শ্রী জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ সরস্বতীর বীণার ডাক শুনলেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল ছাত্র, উচ্চশিক্ষিত সুপ্রতিষ্ঠিত বংশের সন্তান উত্তর ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতকে জীবনের সঙ্গী করলেন। কণ্ঠে, তালবাদ্যে, সুরযন্ত্রে তাঁর অবিসংবাদী অধিকার। তিনি ধ্রুপদী সঙ্গীতের আশ্চর্য ও অচেনা জগতে প্রবেশ করেছেন— গন্ধর্বলোকের অবগুণ্ঠন মোচন করেছেন।

এই বইটিতে বিধৃত আছে সেই আশ্চর্য জগতের কথা, আছে সেই আশ্চর্য মানুষদের কথা—যাঁরা সুরদেবীর বরপুত্র, যাঁরা এই ধূলিমাটির সংসারে পরিচয় করান চেতনার অতীত এক স্বর্গলোকের। আর আছে তাঁর সাধনার কথা, তাঁর ছাত্রদের কথা।

যাঁরা উত্তর ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতকে বাংলায় মর্যাদার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাঁদের মধ্যে শ্রী জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ অদ্বিতীয়। তাঁর জীবনবোধের গগনব্যাপী উদারতা ও গভীরতার প্রকাশ বইটির ছত্রে ছত্রে। সর্বোপরি, জীবনের প্রভাতবেলায় যে ডাক শুনে তাঁর প্রাণ সুরের প্রসাদ পাওয়ার জন্য আকুল হয়েছিল—সেই স্বপনপারের ডাক তিনি আমাদের মতো প্রসাদকামীদের জন্য পরিবেশন করেছেন তাঁরই উপযুক্ত রসঘন লেখনীতে।

 সঙ্গীত বিষয়ে এক বিরল পরিপূর্ণতাসম্পন্ন সঙ্গীতজ্ঞ শ্রী জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ।  সঙ্গীতের বিভিন্ন ধারা—কণ্ঠসঙ্গীত, যন্ত্রসঙ্গীত, তালযন্ত্র—যে ধারাতে তিনি হাত দিয়েছেন তাতেই সোনা কলেছে। সঙ্গীতের বিভিন্ন ঘরানার সঙ্গে ঘটেছে তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিচয়। 

আকাশবাণীতে Producer of Music পদে থাকার সময় তিনি সুগম সঙ্গীত’ নামে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের প্রকৃত পরিচয় আদর্শ সঙ্গীতশিক্ষক হিসাবে। অগণিত ছাত্রছাত্রী তিনি তৈরি করেছেন যাঁরা আজ ভারতীয় সঙ্গীত জগতে প্রতিষ্ঠিত। এছাড়াও, তিনি সার্থক সঙ্গীত রচয়িতা।

    সঙ্গীত জগতের অবিসংবাদী সম্রাট পণ্ডিতজি তাঁর স্মৃতিচারণে তুলে এনেছেন সুরলোকের বরপুত্রদের কথা — বড়ে গোলাম আলি খাঁ, ভীমসেন যোশী, আমীর খাঁ, আলি আকবর, রবিশঙ্কর, বিলায়েৎ খাঁ প্রমুখ জীবিত হয়ে উঠেছেন তাঁর চিত্রময় লেখনীতে।